চাঁদের পাহাড়

Home / Book Review / চাঁদের পাহাড়

বইয়ের নামঃ চাঁদের পাহাড়

লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

বই নং – ১২৬২

অনির্বাণ পাঠাগার

শঙ্কর বাংলার গাঁয়ের ছেলে, বাংলার গাঁয়ের মানুষ যেমন হয় শঙ্কর তাদের থেকে একটু আলাদা, তার ভালো লাগে নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে। কিন্তু শঙ্করের সেই ইচ্ছায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়  পরিবারের দৈন্য দশা। সংসার চালানোর অর্থের জন্য শঙ্করকে চাকুরি খুঁজতে হচ্ছে, সেই সাধারণ বাঙ্গালির মতো কারখানার খাটুনিই হয়ত তার শেষ গন্তব্য হবে। ঠিক এমনি সময় আফ্রিকায় কাজ করার জন্য শঙ্করের কাছে একটি সুযোগ আসে । শঙ্করও এক কথায় রাজি হয়ে যায় । সাথে সাথে শুরু হয় প্রস্তুতি জাহাজে করে পৌঁছে যায় আফ্রিকায়। চাকুরি হয় রেলওয়েতে । নতুন চাকুরি নতুন দেশ নতুন পরিবেশে প্রতিদিনই শঙ্কর এই দেশকে দেখছে আর অভিভূত হচ্ছে। বিশাল প্রান্তর জঙ্গল, বড় বড় ঘাস, বাঘের ভয়, পানির সংকট সব মিলিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে শঙ্করের । এর মাঝেই হঠাৎ শুরু হয় মানুষখেকো বাঘের উৎপাত । সারারাত জেগে পাহারা দিতে হয় তবুও একটু দলছুট হলেই নির্ঘাত মৃত্যু । এই পরিস্থিত কয়েকদিন চলার পর কাজ প্রায় বন্ধ, শ্রমিকরা প্রাণের ভয়ে তাবু থেকে বের হয় না। এমন সময় শঙ্করের বদলি হয় আরেকটি রেলস্টেশনে । একেবারে অচেনা জায়গায় নতুন দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় । সেখানে আগে যে দায়িত্বে ছিল সেও একজন ভারতীয়, কুশল বিনিময়ের পর দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তাকে বিদায় দিয়ে শঙ্কর লক্ষ্য করল এই স্টেশনে এবং এর চারপাশে কয়েক মাইলের মধ্যে সেই একমাত্র মানুষ। পানি আনতে হয় অনেকটা দুরের পথ অতিক্রম করে, খাবার আশে ট্রেনে করে মাস শেষে বেতন  থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। স্টেশন আর পাশের একটি কুঁড়ে ঘরে রান্নার ব্যবস্থা । ট্রেন থেকে যে লোক খাবার দিয়ে যায় তার আচরণ শঙ্করের কাছে কেমন অদ্ভুত লাগে। কি যেন গোপন করছে বলে মনে হয়। শঙ্করের কাজ তেমন নেই ট্রেন যাওয়া আসার সময় ছাড়া সারাদিন অবসর। শঙ্কর আশে পাশের জায়গা ঘুরে দেখে। এমনি একদিন ঘুরার সময় এক বিদেশীকে রাস্তায় বেহুঁশ অবস্থায় পরে থাকতে দেখে তাকে নিজের ঘরে নিয়ে এসে সেবা করে সুস্থ করে তুলল । লোকটি মধ্য বয়স্ক রুক্ষ চুল চেহারায় অমানুষিক পরিশ্রম ও ক্লান্তির ছাপ। সুস্থ হওয়ার পর শঙ্করকে সে তার এই জঙ্গলে আসা এবং ঘুরতে ঘুরতে কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিন গুনছিল, শঙ্কর তার প্রাণ বাঁচিয়েছে । শঙ্করকে তাই সে একটি গোপন তথ্য দেয় যে এই জঙ্গলে সাদা পাথর পাওয়া যায়, এই বয়সে তার একার পক্ষে তা সংগ্রহ করা সম্ভব নয় কিন্তু যদি শঙ্কর সাহায্য করে তাহলে তারা দুজনেই অনেক সম্পদের মালিক হতে পারে। শঙ্কর এক নতুন রোমাঞ্চের সন্ধান পায়। বিপদের পথে নতুন কিছু জানার জন্য ঘুরে বেরানোর ইচ্ছা শঙ্করের বহুদিনের। দুদিন চিন্তা করে শঙ্কর জানায় যে সে রাজি। শুরু হয় তাদের যাত্রা, এক বিশাল পর্বত শ্রেণিতে এসে পথ হারায় শঙ্করের দল। দল বলতে শঙ্কর আর তার সাথের সেই মধ্য বয়স্ক ভিনদেশি আলভারেজ । এর মধ্যে নতুন সমস্যা দেখা দেয় খাদ্য সংকট, সাথে হঠাৎ শুরু হয় অগ্নুৎপাত। প্রচণ্ড অগ্নুৎপাতের হাত থেকে বাঁচতে রাতের অন্ধকারে অবস্থান ত্যাগ করতে হয়। কোথায় যাচ্ছে জানে না শুধু জানে এই জায়গা থেকে দূরে সরে যেতে হবে। সারারাত অগ্নুৎপাত হলো। দুইজনেই প্রচণ্ড ক্লান্ত সাথে খাবারের সংকট, এর মাঝে কয়েকদিন ধরে এক অদ্ভুত প্রাণীর হাঁটাচলার শব্দ শুনছে, যা মানুষের মতো দুই পায়ে হাতে একটু ঘসে পা টেনে টেনে । শব্দ শুনলেই   আলভারেজ সতর্ক হয়ে যায়, তাবু থেকে বের হতে নিষেধ করে। সারারাতের দুর্যোগের পর আলভারেজ খাবারের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং শঙ্করকে সতর্ক থাকতে বলে। হঠাৎ শঙ্কর এই আওয়াজ শুনতে পায়। আলভারেজকে সতর্ক করতে গুলি ছুঁড়ে পায়ের আওয়াজ লক্ষ্য করে কিন্তু হিতে বিপরীত হয়। আলভারেজে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে শঙ্কর। বিশাল জঙ্গলের পর কালাহারি মরুভূমি, এই কালাহারি প্রচুর পর্যটকের প্রাণ নিয়েছে। ম্যাপ কিভাবে পড়তে হয় তাও শঙ্করের পুরোপুরি আয়ত্তে আসেনি। এইদিকে খাবারও শেষ, সাথে থাকা গুলিও ফুরিয়ে এসেছে। চোখে অন্ধকার দেখছে শঙ্কর তবে কি এই জঙ্গলেই প্রাণ যাবে শঙ্করের, সে কি আর তার প্রিয় গ্রাম দেখতে পাবেনা? বাংলার এক অভিযান প্রিয় যুবকের অভিযান কেমন হল তা জানতে চাঁদের পাহাড় বইটি পড়ুন। পুরো বইতে আরও চমক খুঁজে পাবেন ।

Leave a Comment