শ্যামল ছায়া

Home / Book Review / শ্যামল ছায়া

বইয়ের নামঃ  শ্যামল ছায়া

লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ

বই নং – ৭৫০

অনির্বাণ পাঠাগার

১৯৭১ সাল  যুদ্ধ শুরু হয়েছে  বিভিন্ন গ্রামে, বিক্ষিপ্তভাবে জয়ের খবরও আসছে। তেমনি একটি অপারেশনের জন্য যাত্রা করেছে একদল তরুণ, তরুণ বলতে বেশিরভাগ যুবক  বয়সী এরমাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, মাঝি, গ্রামের যুবকও আছে। দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে হুমায়ূন, এটি তার নেতৃত্বে প্রথম অপারেশন। দলের অন্যান্যদের তুলনায় দলনেতা হুমায়ূন কিছুটা দুর্বল। কয়েক মাইল হাঁটার পরও বাকিরা যেভাবে হাঁটছে তাতে তাদের খুব একটা সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না কিন্তু হুমায়ূন কিছুটা পিছিয়ে পরছে, দলের অগ্রভাগে আছে হাসান আলী তিনি পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আজকে তারা যে ক্যাম্প আক্রমণ করতে যাচ্ছে  তার নাম মেথিকান্দা। মেথিকান্দা নামটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। কয়েকবার আক্রমণেও এই ক্যাম্প দখল করা যায় নি বরং তা পাকিস্তানীদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। মেথিকান্দা এখন মুক্তিবাহিনীর মৃত্যুকুপ হিসাবে পরিচিত। এই নাম এমনি এমনি আসেনি বিগত কয়েকটি যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা শুধুই পরাজিতই হয়নি প্রতিবারই কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। শেষের বার কমান্ডার আবু ভাইকে হারাতে হয়েছে। এইবারের যুদ্ধে তাই মেথিকান্দা জয় করতেই হবে। দলের অন্যান্য সদস্যরা এগিয়ে চলছে সবার প্রথমে হাসান আলী যাকে অদ্ভুত বললে ভুল হবে, গ্রামের ছেলে কথা বলে খুবই কম কিন্তু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির অধিকারী অনেকদূর থেকেই বিপদ বুঝতে পারে। জাহাজের আওয়াজ, হাঁটার শব্দে বলে দিতে পারে দূরে শত্রু নাকি মিত্র। এই হাসান আলীর যুদ্ধে আসার ঘটনাও অদ্ভুত যুদ্ধের শুরুতে যোগ দিয়েছিল রাজাকার বাহিনীতে, বেতন ছিল, খাবারের নিশ্চয়তা ছিল কিন্ত সব ছেড়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিল। এই দলের প্রত্যেকের যুদ্ধে আসার ঘটনা ভিন্ন কিন্তু স্বপ্ন এক স্বাধীন দেশ চাই। অনেকেই চলে গেছে গত যুদ্ধে আবু ভাইকে হারিয়েছে। আজকের যুদ্ধে পরিণতি কি হয় কে জানে হুমায়ূন হাঁটছে আর ভাবছে। এই হাঁটা পথ শেষ হলে নৌকা পারি দিয়ে আবার হাঁটতে হবে তারপর মুক্তিবাহিনীর সাথে আরেকটি দল যোগ দিবে। হুমায়ূন মায়ের কথা স্মরণ করে কতদিন মাকে দেখে না, বাবা, বোন তাদের চেহারা ঝাপসা হয়ে এসেছে। বাড়ি ঘর ছেড়ে যখন সবাই ঢাকা থেকে পালাচ্ছিল তখন মাঝপথে বোনকে হারিয়েছে, টানা হাঁটা পথের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শেষ রাতে জ্বর উঠেছিল। চিকিৎসার অভাবে হারাতে হয় ছোট বোনকে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে হয় পিছিয়ে পরছে কি না শেষ রাতের দিকে তাদের সাথে যোগ দিতে পারবে তো টুলু বাহিনি? এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী জিততে পারবে কি না তা নির্ভর করছে ঠিক সময়ে সকলের উপস্থিতির, প্রত্যেকটি মানুষ অপেক্ষা করছে মেথিকান্দা জয়ের একটি শ্যামল ছায়ার গ্রাম যেখানে কোন শত্রু থাকবে না। যুদ্ধ মানুষকে কিভাবে একত্রিত করে প্রতিটি মানুষের গল্পগুলো আলাদা, প্রত্যেকে স্বপ্ন দেখে স্বাধীন দেশের আপনজনের সাথে দেখা করার। এই স্বপ্ন কি আদৌ পুরণ হবে? মুক্তিযোদ্ধাদের দলের মানুষগুলোর জীবন স্বপ্ন ও বাস্তবতার এক উজ্জ্বল প্রতিছবি শ্যামল ছায়া।

Leave a Comment