রিভার গড

Home / Book Review / রিভার গড

বইয়ের নামঃ রিভার গড

লেখকঃ উইলবার স্মিথ

বই নং – ১৭২

অনির্বাণ পাঠাগার 

রিভার গড উইলবার স্মিথের একটি অনবদ্য উপন্যাস। যারা রোমাঞ্চকর উপন্যাস পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি দারুণ বই। প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসের কাঠামো গড়ে উঠেছে । এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বহুগুণের অধিকারী এবং বুদ্ধিদীপ্ত একজন দাস টাইটা হেরাসের প্রশ্বাসে বসে  ভাবছে সময়ের সাথে সাথে লসট্রিস আরও বেশি সুন্দরী ও পরিণত হয়ে উঠছে। একেবারে শিশু বয়স থেকে লসট্রিসকে মানুষ করার দায়িত্ব তার উপর। হেরাসের প্রশ্বাসে বসে টাইটার কপালে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কারণ এই যে শিকারে লসট্রিসের অংশগ্রহণ তার বাবার কাছে গোপন করা হয়েছে । টাইটা হচ্ছে লসট্রিসের বাবা ইনটেফের দাস। কিশোরী লসট্রিসের অভিভাবক হিসাবে দেখাশোনার দায়িত্ব পরে টাইটার উপর । লসট্রিসের প্রতি যেমন একধরণের মুগ্ধতা ও ভালোবাসা আছে টাইটার তেমনি তার বাবা ইনটেফের প্রতি আছে প্রবল ঘৃণা। তাই লসট্রিসের সাথে ট্যানাসের সম্পর্ক, একসাথে জলহস্তী শিকারে যাওয়া এবং ট্যানাসের জাহাজ হেরাসের প্রশ্বাসে অবস্থান করা সবই করা হয় প্রভু ইনটেফের অগোচরে । টাইটা শুধু ইনটেফের দাসই নয় একই সাথে ইনটেফের সকল গোপন কাজের সাক্ষী এবং গুপ্তচরদের নিয়ন্ত্রক । ইনটেফের  অনেক অন্যায় কাজের একমাত্র সাক্ষী এই টাইটা। সমাজের উচ্চশ্রেণির অন্দরমহলের সুনিপুণ চিত্র পাওয়া যায় টাইটার বর্ণনায়। ফারাও মামোসের চিকিৎসা  এবং অমনরার ইন্দ্রজালের মাধ্যমে মিশরের উত্তরাধিকার সম্পর্কে ভবিষ্যৎবানী,  ফারাওর সাথে লসট্রিসের বিয়ে, ট্যানাসের বিচার এবং অভিযোগ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ দুর্ধর্ষ ডাকাত বাহিনীকে পরাস্ত করা, ইনটেফের মিশর থেকে পলায়ন এবং মিশরের ফারাওর সাথে হিকসসদের যুদ্ধে মিসরীয়রা নিজ ভুমি থেকে বিতাড়িত হয় । শুরু হয় আরেক উপাখ্যান। মিশরীয়রা স্বদেশ ত্যাগ করে যাত্রা করে অজানার উদ্দেশ্যে সাথে থাকে নতুন ফারাও, ভবিষ্যৎ মিশরের উত্তরাধিকারী । সেই অজানা যাত্রায় এক নতুন পৃথিবীর সাথে দেখা হয় অভিযাত্রী দলের, সবুজ গাছপালা, পাহাড়, বন, বন্য প্রাণী ও নতুন মানব বসতি এক নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় হয় মিশরবাসীর। নিজ মাতৃভূমির টানে আবারো শক্তি সঞ্চয় করে ফেরার টান অনুভব করে অভিযাত্রী দল এরই মাঝে নতুন জনপদে যুদ্ধ হয় স্থানীয়দের সাথে প্রাণ হারায়  অনেক শক্তিশালী যোদ্ধা। এরই মাঝে বনের ভিতর তৈরি করা হয় ফারাওর জন্য সমাধি। গহীন বনে সুরক্ষিত সেই সমাধিক্ষেত্রের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয় মিশরের বাহিনী এইবার ফেরার পালা। মাতৃভূমি শত্রু মুক্ত করার এই লড়াইয়ে হিকসসদের সাথে শুরু হয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। যার সব বর্ণনা উঠে আসে টাইটার সুনিপুণ লেখায়।

সবশেষে একজন আবিস্কারক, চিকিৎসক, ভবিষ্যৎবক্তা , স্থাপত্যশিল্পী, ইতিহাসবিদ এবং কবি হিসাবে যার সমান দক্ষতা এবং লসট্রিসের সার্বক্ষণিক সঙ্গী থেকে মিশরের যে অনিদ্য সুন্দর বর্ণনা করেছে সেই টাইটা আর কেউ নয় একজন দাস। একজন দাসের চোখে মিশরের এই রোমাঞ্চকর বর্ণনা সত্যিই অসাধারণ।

Leave a Comment