সারাদিন বাইরে আড্ডা দিয়ে বাসায় যখন ঢুকলাম তখন রাত প্রায় সাড়ে ১২ টা। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকেই দেখি ওয়ালে, টাইমলাইনে মা দিবসের শুভেচ্ছা। আগামীকাল মা দিবস সবাই বিভিন্ন ঘটনা শেয়ার করতেছে, কেউ আনন্দের ঘটনা, কেউ ভুল করে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা, পড়তেছি আর ভাবতেছি আমিও তো কম বাঁদরামি করি নাই। আমারও তো মাফ চাওয়া উচিত, সাথে সাথেই মাথায় বুদ্ধি আসলো সকালে একটা গিফট দিয়ে মাফ চাইলে কেমন হয়? গিফটের দোকান তো সব বন্ধ। কি গিফট দিবো? এইটা মাথায় আসতেই মনে হইল নিজেই কিছু একটা বানাই। আমার আবার সৃজনশীল কাজে হাত ভালো। ঘরে আমার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ (মায়ের কাছে যেইগুলা আবর্জনা) জিনিস সামনে নিয়া বসলাম। অনেক চিন্তার পর সিদ্ধান্ত নিলাম একটা গিফট বক্স বানাইয়া তার ভিতর আমার আর মায়ের তোলা ছবি সব একসাথে উপহার হিসাবে দিবো। রাত আড়াইটায় যখন ছবি যোগার কইরা কাগজ কাইটা জোড়া দিবো তখন দেখি আঠা, স্কচটেপ কোনটাই নাই। এতরাতে এই জিনিস কৈ পাই? হঠাৎ টেবিলে ভাতের পাতিলের কথা মনে হইতেই সমস্যার সমাধান হইয়া গেল। সব কাজ শেষ করতে করতে প্রায় চারটা বাজলো, সবকিছু গুছাইয়া ঘুমাইতে গেলাম।
সকালে অ্যালার্ম শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি সাতটা বাজে, আম্মা রান্নাঘরে কাজ করতেছে। এইটাই মোক্ষম সময় গিফট দিয়া আসি। হাতমুখ ধুইয়া রান্নাঘরে ঘরে গিয়ে আম্মাকে ডাক দিয়া গিফট সামনে আনতেই আম্মা রাগী চোখে তাকাইয়া বলল, রাত্রে পাক করা ভাত তাইলে তুই নষ্ট করছস?
আমি দেখি অবস্থা বেগতিক বেশিক্ষণ এইখানে দাঁড়াইয়া থাকলে কপালে শনি আছে। আস্তে কইরা পিছনে আইসা চেয়ার থেকে শার্টটা নিয়া এক দৌড়ে ঘরের বাইরে আইসা দৌড়াইতে দৌড়াইতে পিছনে ফিরা বললাম,
আম্মা ভুল হইয়া গেছে, মাফ কইরা দেন।
পিছন থেকে আম্মা বলতেছে, তুই বাসায় আয়, আজকে....
দৌড়াইতেছি আর ভাবতেছি বড় বাঁচা বাঁইচা গ্যাছি, এখনও জানে না নতুন শাড়ির পাড় কাইটা রিবন বানাইছি।
গদিনশীন লেখক (মিজীসাব)